IQNA

ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করতে কাজ করছেন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন সৈনিক

19:55 - December 07, 2018
সংবাদ: 2607478
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জেসন ক্রিস হওক ২০১৫ সালে তার সেনাবাহিনীর চাকুরী শেষ হতে যাওয়ার পূর্বে চিন্তা করেছিলেন যে, তিনি তার অবসর দিনগুলো শিক্ষকতা এবং মাছ ধরাতে কাটিয়ে দিবেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পাইনহার্সট লাইব্রেরি থেকে ডাক পড়াতে তাকে তার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হল।

আর জেসন ক্রিস হওক যখন শিক্ষকতায় নিজেকে জড়িয়ে নিলেন তখন তিনি একটি নতুন মিশন পেলেন আর তা হচ্ছে: মধ্যপ্রাচ্য, ইসলাম এবং মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে এমন একটি জনগোষ্ঠীর সামনে আলোচনা করা যাদের এসব সম্পর্কে খুব কমই ধারণা রয়েছে।

ক্রিস হওক যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীণ একটি চার্চে এ সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং মাঝে মধ্যে তাকে রাত্রি বেলা চার্চের গুরুদের বাড়ি পৌঁছিয়ে দিতে হয়।

কিন্তু এতকিছু স্বত্বেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে তাদের কে সহনশীল করে তোলার মিশন ত্যাগ করেন নি।

তিনি বলেন- ‘আমি যখন সেনাবাহিনী থেকে অবসরে জীবনে আসি তখন দেখতে পাই যে, যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এটি আমাকে পীড়িত করে।’

আর তার অবসর গ্রহণের পর থেকেই তিনি তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০১৭ সালে তিনি ওল্ড স্টোন প্রেস নামক প্রকাশনা সংস্থা থেকে ‘The Quran: A Chronological Modern English Interpretation’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। যেসব লোকজন পবিত্র কুরআন এবং মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব কম জানেন তাদের কে উদ্দেশ্য করেই ক্রিস হওক এ বইটি লিখেছেন।

আর চলতি বছরের শুরুতে তিনি ইন্টারনেটে ‘We’re Just Talking About It’ নামক একটি পডকাস্ট প্রচারণা শুরু করেছেন।

একজন সৈন্য হিসেবে থাকার সময় ক্রিস হওক ইসলামের প্রতি আগ্রহ বোধ করেন এবং তার অভিজ্ঞতা সমূহকে এখন তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন।

ক্রিস হওক সেনাবাহিনীর একজন মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এবং তিনি তার চাকুরী কালীন সময়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেছেন।

কিন্তু তার এধরনের প্রথম অভিজ্ঞতা হয় ১৯৯৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্যারাট্রুপার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময়।

ক্রিস হওক বলেন- ‘তা ছিল আমার জন্য সত্যিকার অর্থেই ফিরে দাঁড়ানোর মত একটি ঘটনা।’

মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে তার আগ্রহ তার চাকুরীর অন্যতম লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়। কিন্তু শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন যে, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় যে পরিমাণে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে তা সম্পর্কে দেশটির জনগণ খুব কমই জানে।

ক্রিস হওক অবসর গ্রহণ করার পরে পাইনহার্সট লাইব্রেরিতে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতেন। তিনি সেখানে তার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতেন কিন্তু তিনি লক্ষ করলেন যে, তাকে আর সেনাবাহিনী সম্পর্কিত প্রশ্ন করার চাইতেও ইসলাম এবং মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশী প্রশ্ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন- ‘ইসলাম এবং মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে আমেরিকানদের কাছে কোনো সূত্র নেই। তারা যা জানে তা হচ্ছে, কিছু মিথ এবং কিছু ভুল ধারণা।

তিনি এমন লোকদের নিকটে আলোচনা করা শুরু করে দিলেন যারা জীবনে কখনো কোনো মুসলিমের সাথে পরিচিত হন নি এবং সেইসব লোক যারা শুধুমাত্র টেলিভিশন দেখেই মুসলিমদের সম্পর্কে একটি গতানুগতিক ধারণ করে বসে আছেন।

ক্রিস হওক বলেন- ‘সুতরাং আমি সন্দেহ-প্রবণ দর্শকদের বেছে নিলাম।’

আমাদের দেশে ইসলাম সম্পর্কে তেমন আলোচনা হয় না আর যেটুকু হয় তাতে কিছু ভুল ধারণার সংমিশ্রণ থাকে।

ক্রিস হওক একটি খ্রিষ্টান ব্যাপটিস্ট পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তিনি বলেন- ‘আমার বেড়ে উঠা কালীন সময়ে আমি খ্রিষ্টান ক্যাথলিজম সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না।’

‘আমি এখানে কোনো কিছু কে রক্ষা করতে কিংবা অবদমন করতে আসি নি। আমি শুধুমাত্র প্রশ্নের উত্তর দিই এবং লোকজনের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া সৃষ্টি করি।’

ক্রিস হওকের মতে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা সমূহের জন্ম লাভ করেছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী আক্রমণের মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, সেনা গণ বিদেশে থাকাকালীন মুসলিম সেনাদের সাথে মিশতে পারার ফলে মুসলিমদের সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা লাভ করতে সক্ষম হন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ লোকের এ ধরণের অভিজ্ঞতা নেই।

তার আলোচনায় হওক ইসলাম এবং মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ধৈর্য ধরে প্রশ্ন সমূহের উত্তর দিয়ে থাকেন যতক্ষণ না অবধি এগুলো ঘৃণা মূলক না হয়ে থাকে।

তিনি বলেন- ‘আমি রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করে থাকি। আমি এসব ধারণা সমূহের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকি এবং প্রশ্ন নিয়ে থাকি।’

তার কাছে ইসলাম সম্পর্কিত আশা বেশীরভাগ প্রশ্নেই ইসলাম কে একটি সন্ত্রাসীদের ধর্ম হিসেবে চিত্রায়িত থাকে আর তিনি খুব সচেতন ভাবেই এসকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন।

হওক বলেন, এমনকি খ্রিষ্টানদের মত মুসলিমরা এত বেশী অপরাধ প্রবণ নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখানে কোনো ভালো কিংবা খারাপ মুসলিম নেই, এখানে শুধুমাত্র কিছু ভালো মানুষ এবং খারাপ মানুষের বসবাস রয়েছে।

তিনি বলেন- ‘আমি এখানে ৭০ এবং ৮০ ঊর্ধ্ব বয়সের লোকজনদের পেয়ে থাকি যারা বলে থাকেন যে, তারা তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু অন্যরা শুনতে আগ্রহ দেখায় না।’

‘আমি মনে করি এটা উপযুক্ত শিক্ষা না থাকার কারণে হয়ে থাকে। আমি শুধুমাত্র লোকজনদের সঠিক বিষয়টি বুঝাতে চাই যাতে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটাই সর্বোত্তম যা আমরা আশা করতে পারি।’ ফেইঅবজারভার ডট কম।

captcha