IQNA

যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানে ইসলাম ছিল আমার মানসিক আশ্রয়

0:06 - June 09, 2021
সংবাদ: 2612932
তেহরান (ইকনা): জাপানের নাগরিক আলী মুহাম্মদ মুরি ১৯৪৬ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরাজয় যখন জাপানিদের নানাভাবে বিপর্যস্ত করেছিল, তখন ইসলামের ভ্রাতৃত্বনীতিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানিদের মুক্তি দেখেছিলেন তিনি।

পরাজয়ের হতাশা ও গ্লানি থেকে জাপানিদের মুক্ত করতে, সুখী জাপান গড়তে জীবনের বাকি দিনগুলোতে একজন সমাজসেবী ও ইসলামপ্রচারক হিসেবে কাজ করেন তিনি। ‘ইসলাম আওয়ার চয়েজ’ গ্রন্থে প্রকাশিত তাঁর আত্মজৈবনিক প্রবন্ধের ভাষান্তর করেছেন আবরার আবদুল্লাহ

প্রায় ১৮ বছর আগে আমি মানচুরিয়ায় অবস্থান করছিলাম। জাপান তখনো বিশ্বের অন্যতম নিয়ন্ত্রক শক্তি। পাইচিংয়ের কাছাকাছি একটি মরুভূমিতে একদল মুসলমানের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তারা ছিল ধার্মিক মুসলিম। তাদের জীবনধারা ও আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। মানচুরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণের সময় ইসলামের প্রতি আমার মুগ্ধতা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল। ১৯৪৬ সালের গ্রীষ্মে আমি জাপানে ফিরে আসি। জাপান তখন একটি পরাজিত দেশ। জাপানের সামগ্রিক পরিবেশ তখন একেবারে পাল্টে গেছে। জাপানিদের চিন্তা-ভাবনা ও মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছিল। বেশির ভাগ জাপানির অনুসৃত বৌদ্ধধর্ম তখন নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তা জনগণের অবস্থার উন্নতির পরিবর্তে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল বলে মনে করা হয়।

যুদ্ধের পর জাপানের পরিবর্তিত সমাজে খ্রিস্টধর্ম খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করছিল। যদিও আরো ৯০ বছর আগে থেকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম হিসেবে জাপানে খ্রিস্টধর্মের অস্তিত্ব ছিল। জাপানের অনভিজ্ঞ সাধারণ তরুণরা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হচ্ছিল, যারা এরই মধ্যে বৌদ্ধধর্মের প্রতি তাদের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছিল। কিন্তু তারা খুব দ্রুতই হতাশ হলো, যখন দেখল জাপানে খ্রিস্টবাদের আড়ালে ব্রিটিশ-আমেরিকার পুঁজিবাদী স্বার্থ বিদ্যমান। পুঁজিবাদী স্বার্থ হাসিলের জন্যই পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বিতাড়িত (চর্চা না করা অর্থে) খ্রিস্টধর্ম অন্যত্র রপ্তানি করছে। ভৌগোলিকভাবে জাপান রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে অবস্থিত। উভয় দেশে জাপান ও জাপানিদের ওপর তাদের প্রভাব বাড়াতে চায়। কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে বিপর্যস্ত জাপানিদের জন্য তাদের কেউ স্থায়ী ও সুখী সমাধান তুলে ধরেনি।

আমার মনে হলো, এমন পরিস্থিতিতে ইসলামই সঠিক সমাধান দিতে পারে। বিশেষত আমি ইসলামের ভ্রাতৃত্ব-দর্শনকে সম্মান করি। ইসলাম ধর্মমতে, পৃথিবীর সব মুসলিম পরস্পরের ভাই। আল্লাহ পছন্দ করেন, তারা যেন শান্তি ও হৃদ্যতার সঙ্গে বসবাস করে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববাসীর জন্য নিঃস্বার্থ এই ভ্রাতৃত্বই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

গ্রীষ্মের শেষভাগে তিনজন মুসলিম তুকুশিমা পরিদর্শন করে। তারা পাকিস্তান থেকে এসেছিল। তাদের কাছ থেকে আমি ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ পাই। জাপানের কোবে শহরের মতিওয়ালা এবং টোকিওর হাজি ওমর মিতা আমাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেন। আল্লাহর অনুগ্রহে এরপর আমি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হই।

পরিশেষে আমি জোর আশা পোষণ করি যে ইসলামের এই বন্ধন একদিন বিশ্বের প্রতিটি কোনায় মুসলিমদের জাগিয়ে তুলবে। প্রতিটি ভূমি থেকে মহান স্রষ্টার বাণী গৌরবের সঙ্গে ধ্বনিত হবে। ফলে পৃথিবী স্বর্গে পরিণত হবে এবং আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ প্রকৃত শান্তি খুঁজে পাবে। তখনই জগদ্বাসী প্রকৃতার্থে বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করবে।

captcha