IQNA

পাকিস্তানের মুসলিম ঐক্য পরিষদ পার্টির মুখপাত্র:

উপনিবেশিক শক্তিগুলো তাকফিরি গ্রুপ তৈরি করে ইসলামকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে

9:26 - October 20, 2021
সংবাদ: 3470851
তেহরান (ইকনা): পাকিস্তানের মুসলিম ঐক্য পরিষদের মুখপাত্র বলেছেন: উপনিবেশিক শক্তিগুলো ইসলামকে বদনাম করতে এবং বিশ্বকে ইসলামের আলোতে আলোকিত করার ক্ষেত্রে বাধা প্রয়োগের জন্য সংগঠিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করছে।
পাকিস্তানের মুসলিম ঐক্য পরিষদের মুখপাত্র “হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মাকসুদ আলী দুমাকী” ১৯মে অক্টোবর বিকালে অনুষ্ঠিত ইসলামী ঐক্য বিষয়ক ৩৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে “ইসলামী বিশ্বে তাকফিরি গোষ্ঠী এবং নতুন চরমপন্থি সংগঠন গঠন এবং ইসলামী দেশসমূহে তাদের প্রভাব ও প্রচার এবং ভবিষ্যতে তাদের মোকাবেলার কৌশল ও উপায়”-এর আলোকে বলেছেন: সাধারণভাবে, বিশ্বব্যাপী উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্বে তাকফিরি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে, এবং এই গোষ্ঠীগুলির গঠন, প্রশিক্ষণ, শক্তিশালীকরণ ও প্রচার এবং তারপর বৈশ্বিক পর্যায়ে তাদের প্রচারের জন্য ইসলাম বিরোধী শক্তির এজেন্ডায় রয়েছে।
 
তিনি “ইসলামকে শান্তি ও সন্ধির ধর্ম” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন: তাকফিরি উপাদানগুলো বিশ্বের সামনে ইসলাম ধর্মের একটি মিথ্যা ভাবমূর্তি উপস্থাপন করেছে, অথবা অন্য কথায়, উপনিবেশিক শক্তিগুলো এই উপাদানগুলোর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের একটি ছবি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে যা দেখে বিশ্ব ভীত হয়ে পড়বে। আর এর মাধ্যমে বৈশ্বিক ভাবে উপনিবেশিক এবং অহংকারী শক্তি যা সমগ্র বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে তা চিরস্থায়ী করতে চাচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, তারা "ভাগ করুন এবং শাসন করুন" নীতি গ্রহণ করেছে। এটি বৈশ্বিক উপনিবেশের পুরানো নীতি এবং পদ্ধতি।
 
তিনি তাকফিরীদের উত্থান সম্পর্কে বলেছেন: মিস্টার হামফ্রের মতে, ব্রিটেন তার উপনিবেশিক নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী আবদুল ওয়াহাব নজদীকে যুদ্ধের জন্য এবং মুসলমানদেরকে বিতাড়িত করতে এবং তাদের বহিষ্কার করার জন্য নিয়োগ করেছিল এবং এর মাধ্যমে "ওয়াহাবিজম" নামে একটি মাজহাবের উদ্ভব হয়েছে।  
 
বর্তমান যুগে উপনিবেশিক শক্তিগুলি এই ওয়াহাবিজম গোষ্ঠীগুলির হৃদয় থেকে বেশ কিছু গ্রুপ বের করে এনেছে যা বিশ্ব বিভিন্ন নামে বিদ্যমান, উদাহরণস্বরূপ, তারা পাকিস্তানে লস্কর-ই-ঝাংভি এবং সিপাহ-ই-সাহাবা নামে কাজ করে, যারা সাহাবিদের পবিত্র নাম ব্যবহার করে, কিন্তু আসলে তারা ইয়াজিদের সেনাবাহিনী। তারা ইয়াজিদের চিন্তা ও দর্শন অনুসরণ করে।
 
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মাকসুদ আলী দুমাকী আরও বলেন: অন্যদিকে, আমরা দেখছি যে বিশ্বজুড়ে উপনিবেশিক শক্তিগুলো তাকফিরি চিন্তার প্রচার করছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম নামে এবং আফগানিস্তানে তালেবান নামে কাজ করছে। পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) কয়েকটি এলাকায় বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা জনগণ ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও হামলা চালায়, মসজিদে হামলা করে এবং নিরীহ মানুষকে পাশবিক ভাবে হত্যা করে। তারপর আমরা আল-কায়েদা এবং অতি সম্প্রতি দায়েশের (আইএসআইএস) কার্যক্রম দেখেছি।
 
তিনি বলেন: কোন সন্দেহ নেই যে উপনিবেশিক শক্তিগুলি সমস্ত তাকফিরি গোষ্ঠী এবং গোষ্ঠী গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে, যারা হত্যা ও লুটপাট করে। প্রকৃতপক্ষে তারাই এই গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। এ কারণেই তাকফিরি গোষ্ঠীগুলো সবসময় কুরআনের শিক্ষার পরিপন্থী কাজ করেছে। একদিকে তারা "আল্লাহ আকবর" বলে চিৎকার করে বিস্ফোরণ ঘটায়। আর এরফলে নিরীহ মানুষ নিহত হয়। তারা মসজিদ ও স্কুলেও হামলা চালায়। অন্যদিকে, আমরা দেখছি যে এই গোষ্ঠীগুলি এখন পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। তারা কখনো জেরুজালেমের মুক্তির দাবি করেনি। বরং জেরুজালেমের মুক্তির জন্য এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে তারা সবসময় অভিযান চালিয়েছে।
 
তিনি তাকফিরি গোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্য সম্বোধনে বলেন: তাদের প্রথম লক্ষ্য ইসলামকে বদনাম করা। ইসলাম একটি বিপ্লবী ধর্ম এবং নিপীড়ন, উপনিবেশিকতা এবং অহংকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শেখায়। ইসলামকে বদনাম করার জন্য এবং ইসলামের আলোকিততাকে পৃথিবীতে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য, উপনিবেশিক শক্তিগুলো সংগঠিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করে, যারা ইসলামকে কলঙ্কিত করার জন্য “আল্লাহু আকবার” বলে চিৎকার করে সন্ত্রাসী অভিযান চালায়।
 
দ্বিতীয় লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন: তাদের আরেকটি মহান লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামী বিপ্লবকে সীমিত করা। ইসলামী বিপ্লবের বার্তা শত বাধা এবং প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আলোর মত জ্বলজ্বল করে এবং বিশ্বের জাতিগুলিকে প্রভাবিত করে। কিন্তু উপনিবেশিক শক্তিগুলো ইসলামী বিপ্লবের গতিবিধি ও গতিশীলতা রোধে তাকফিরি গোষ্ঠী তৈরি করে এবং তারপর তাদের সাহায্য কামনা করে।
 
মাকসুদ আলী দুমাকী বলেন: তাদের তৃতীয় লক্ষ্য হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ ও সংঘাত সৃষ্টি করা। যখন একজন ভাই তার ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করছে তখন সে কিভাবে শত্রুর মোকাবেলা করতে পারে? এই গোষ্ঠী তৈরির চতুর্থ উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে উপনিবেশিক আধিপত্য বিস্তার করা এবং সারা বিশ্বে শাসন করা।
 
তিনি আরও বলেন: আমরা দেখি যে সমস্ত অহংকারী ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও, আলহামদুলিল্লাহ! ইসলামের বার্তা আজ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, এবং ইসলামী বিপ্লবের চিন্তা সীমা অতিক্রম করেছে। আলোর বিস্ফোরণ যা বিপ্লবের মহান নেতা উল্লেখ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, "আমাদের বিপ্লব ছিল আলোর বিস্ফোরণের বিপ্লব।" আলোর এই প্রকাশ সকল বিপত্তি অতিক্রম করে বিশ্ব বিপ্লবের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে এবং নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লেবাননে ... আমরা বিপ্লবের বার্তা দেখতে পাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলোর শিখা এখনও প্রজ্বলিত। ইনশাআল্লাহ! সব অহংকারী ও উপনিবেশিক শক্তির জন্য অপমান ও কলঙ্ক অপেক্ষা করছে। তাদের পরাজয় পূর্বনির্ধারিত এবং সত্য সর্বদা মিথ্যার উপর বিজয়ী হয়। এটি কুরআনের প্রতিশ্রুতি: وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا.
 
শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন যে, ইনাশ-আল্লাহ! সত্যের বিজয় হবে এবং বিশ্ব বিপ্লবের আন্দোলন ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের দিকে পরিচালিত করবে এবং যুগের ইমাম (আ.) বিশ্বকে ন্যায়বিচার এবং ন্যায়পরায়ণতায় পরিপূর্ণ করবেন। যেমনটি সাইয়্যেদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.) বলেছেন, ইমাম মাহদী (আ.) অবশ্যই আবির্ভূত হবেন।
«یَمْلَأُ اللهُ به الْأَرْضَ قِسْطاً وَ عَدْلًا کَمَا مُلِئَتْ ظُلْماً وَ جَوْراً».
তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচার এবং ন্যায্যতায় পরিপূর্ণ করবেন যেমনটি পূর্বে নিপীড়নে ভরা ছিল।
 

 

captcha