IQNA

সু চি : জাতিগত নিধনের ভয়ঙ্কর হোতা

22:39 - October 07, 2017
সংবাদ: 2604009
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সঙ্গীতশিল্পী বব গেল্ডফ মিয়ানমার নেত্রী সু চিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জাতিগত নিধনকারী বলে অভিহিত করেন। কলাম্বিয়ার রাজধানী বগোটায় বিশ্ব যুব সম্মেলনে দেয়া ভাষণে তিনি মিয়ানমারের নেত্রী সম্পর্কে এ কথা বলেন। তিনি রুশ নেতা ভলাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘একনায়ক’ বলে অভিহিত করে বলেন, তারা মানুষ হিসেবে আমাদেরকে অপমান করছেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: কর্মী ও সঙ্গীতশিল্পী এসব নেতার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তিনি ‘এ বিশ্বের ব্যাপারে হতাশ’ এবং ‘এসব নেতার প্রতি বিতৃষ্ণ’ হয়ে পড়েছেন।

তিনি ১৯৬টি দেশের ১৪০০ যুবনেতার উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেন, ‘আমি পুতিনের প্রতি বিতৃষ্ণ, আমি শি জিংপিংয়ের প্রতি বিতৃষ্ণ, আমি এরদোগানের প্রতি বিতৃষ্ণ।’ এ সম্মেলনে চারজন নোবেল শান্তিপদক জয়ী ব্যক্তিত্ব, কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্টোস, জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, ইয়েমেনের সাংবাদিক তাওয়াক্কুল কারমান ও বাংলাদেশের মোহাম্মাদ ইউনুস উপস্থিত ছিলেন।

গেল্ডফ বলেন, ‘আমি বিতৃষ্ণ কারণ এই মঞ্চে এমন কয়েকজন মহান ব্যক্তি রয়েছেন যারা আমাদের এ বিশ্বে ন্যায়বিচার, শান্তি ও সমতার জন্য লড়াই করেছেন।’ তিনি নামোল্লেখ ছাড়াই ১৯৯১ সালে অং সান সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার বিষয়ে বলেন, ‘মিয়ানমারে তাদেরই একজন তাদের সবাইকে অপমান করছে, তিনি এই মহান পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন, অন্যদের প্রতি মানবিকতায় উজ্জীবিত করার জন্য পদক পেয়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর একজন জাতিগত নিধনকারীতে পরিণত হয়েছেন। এটি বড় ধরনের অবমাননা।’

রাখাইনের জাতিগত নিধনযজ্ঞ নিয়ে কথা না বলার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন মিয়ানমারের ৭২ বছর বয়সী রাজনৈতিকের অব্যাহত সমালোচনায় সবশেষে শামিল হলেন গেল্ডফ। রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সরকারে গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও বিতাড়নকে জাতিসঙ্ঘ জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে অভিহিত করেছে।

মিয়ানমার সরকারের গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে মাত্র কয়েক দিনে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এখনো সেখানে হত্যাকাণ্ড চলছে এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোত অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে করুণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে অসহায় রোহিঙ্গারা। তাদের আশ্রয়, খাবার ও অন্যান্য সহায়তা জরুরি। জীবিত উদ্বাস্তুরা তাদের গ্রামগুলোতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ভয়াবহ বর্বর হত্যাকাণ্ড, জ্বালাও-পোড়াও, লুট-নির্যাতনের ভীতিকর কাহিনী বর্ণনা করেছেন। প্রকাশ্য দিবালোকে নির্যাতন-লুটের আগে তারা পরিবারের সব সদস্যকে কুপিয়ে, গুলি করে অথবা গলা কেটে হত্যা করে।

মিয়ানমার সরকার পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। গত সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেশটি দাবি করে যে, মিয়ানমারে কোনো জাতিগত নিধন বা গণহত্যা চলছে না। রোহিঙ্গাদের মানবিক সঙ্কট নিয়ে ভূমিকার কারণে অং সান সু চির ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড পদক ছিনিয়ে নেয়া হবে। ৬০-এর দশকে তিনি অক্সফোর্ডে পড়তেন। ইতোমধ্যে সেখান থেকে তার ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

সম্মেলনে গেল্ডফ বলেন, ‘আমাদের এই শতাব্দীতে টিকে থাকার জন্য বিশ্বের যুব নেতাদেরকে সম্পূর্ণ নতুন কাঠামো ও ধারণা তুলে ধরতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভয়ানক বিপজ্জনক বিশ্ব আরো ভয়াবহ বিপদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যেকোনো স্থান থেকে পরিবর্তন আসতে পারে, হোক তা ভালো বা মন্দ। তবে সমাজের প্রয়োজন পূরণ ও এর সাথে ভারসাম্যপূর্ণ কোনো পরিবর্তন এলে কেবল সেটিই হবে কল্যাণকর।’-গার্ডিয়ান/ এমটিনিউজ
captcha