এই মসজিদের স্থাপত্যের চেয়ে এর সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো এই মসজিদটি মহান আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি একটি আদর্শ সমাজ গঠন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এখানকার ইমাম-মুসল্লি ও এলাকাবাসী আত্মার আত্মীয়তে পরিণত হয়েছে। অন্য মসজিদের মতো দৈনন্দিন কার্যক্রম, যেমন—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সার্বিক নিরাপত্তা, ভোজনশালা ইতাদি তো আছেই। পাশাপাশি আছে বিভিন্ন আধুনিক কার্যক্রম। যাকে মৌলিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১. শিক্ষা কার্যক্রম, ২. সেবামূলক কার্যক্রম। নিম্নে উভয়টিই তুলে ধরা হলো—
শিক্ষা কার্যক্রম
মুসল্লিদের দ্বিন শিক্ষার কথা মাথায় রেখে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মৌলিক ইসলামী জ্ঞানচর্চার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ধানমণ্ডি তাকওয়া মসজিদ। যেমন : প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের আগে দুই মিনিটে একটি করে মাসআলা শোনানো এবং ফজর নামাজের পর প্রতিদিন পবিত্র কোরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসির করা, মুসল্লিদের বিশুদ্ধ ঈমান-আকিদা ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুবিধার্তে বয়স্ক কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা, স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের অনাবাসিক মাদরাসার ব্যবস্থা করা, যাতে তারা এখানে বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে পারে। আরো আছে মাদরাসায় পড়তে ইচ্ছুক শিশু-কিশোরদের জন্য মক্তব ও হিফজ বিভাগ। যেখানে পবিত্র কোরআন হিফজের পাশাপাশি বাচ্চাদের ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক শেখানো হয়।
সেবামূলক কার্যক্রম
মসজিদ যেহেতু একটি ইসলামী সমাজ পরিচালনার অন্যতম কেন্দ্র, তাই এখান থেকে সমাজসেবামূলক কিছু প্রকল্পও পরিচালিত হয়। যেমন : মাত্র ১০ টাকায় চিকিৎসা সেবা, প্রতিদিন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সকাল-সন্ধ্যা দুবেলা রোগী দেখেন। মাত্র ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহের মাধ্যমে চিকিৎসা ও ওষুধ সেবা পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় এক শজন রোগী এখান থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকেন।
পাশাপাশি শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, দুর্যোককালে ত্রাণ বিতরণ, অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে হুইল চেয়ার, সেলাই মেশিন ইত্যাদি বিতরণসহ বিভিন্ন রকম সহায়তা করা হয়। বিশেষ করে যারা নওমুসলিম হন, তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা মসজিদ থেকেই করার চেষ্টা করা হয়। গরিব ও দুস্থ শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতার জন্য আছে বৃত্তির ব্যবস্থা।
এলাকাবাসীর জরুরি প্রয়োজনে আছে অ্যাম্বুল্যান্স সেবার ব্যবস্থা, যা জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে রোগী আনা-নেওয়া, লাশবহনসহ বিভিন্ন সেবায় নিয়োজিত থাকে। করোনাকালীন এলাকাবাসীর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স সেবার পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ছাড়া কোনো মুসলিম মারা গেলে তার লাশ সৎকারের জন্য মসজিদের পক্ষ থেকে আছে মৃতদেহ গোসলের কক্ষ। যেখানে ন্যূনতম ফি প্রদানের মাধ্যমে মৃতদেহ গোসল থেকে শুরু করে কাফন-দাফনে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।
এ মসজিদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, মুসল্লিদের জন্য এখানকার দরজা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, যে কেউ যেকোনো সময় এখানে এসে নামাজ/ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে। এবং খুশির দিনে যেমন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের স্মরণ করে, তেমনি বিপদের সময়ও সহযোগিতার জন্য ২৪ ঘণ্টাই ইমাম সাহেবের দারস্থ হওয়ার জন্য মসজিদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়।
মসজিদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত আছে চারজন নিরাপত্তা প্রহরী। মসজিদসংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্মচারীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সোসাইটির পক্ষ থেকেই করা হয়। যেসব ছাত্র মাদরাসায় আবাসিক থাকে, তাদের বেশির ভাগের ফ্রি খাবারের ব্যবস্থাও মসজিদের সোসাইটির পক্ষ থেকে করা হয়।
উল্লেখ্য, সোসাইটির পক্ষ থেকে উল্লিখিত সেবাগুলো মূলত জাকাত ফান্ড থেকে ব্যবস্থা করা হয়। জাতির ক্রান্তিলগ্নে, দুর্যোগকালে সম্মানিত ইমাম বিভিন্ন ধনাঢ্য মুসল্লিদের উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমেও ফান্ড সংগ্রহ করে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। করোনাকালে এই মসজিদের উদ্যোগে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
এমনকি বিশেষ মুহূর্তে এলাকার অনেক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবরা সংযুক্ত ছিলেন। ফলে মসজিদের প্রতিটি মুসল্লি একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে ভীষণ আন্তরিক। তাদের ভালোবাসা মহান আল্লাহর জন্য। মহান আল্লাহ প্রতিটি মসজিদের মুসল্লিদের মধ্যে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি করে দিন এবং প্রতিটি মসজিদকে একেকটি সমাজ গঠনের কেন্দ্র বানিয়ে দিন। কালের কণ্ঠ